মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই ২০১৯
প্রথম পাতা » বিশ্ব সংবাদ » ইসলামবিদ্বেষী বরিস জনসনই নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী
ইসলামবিদ্বেষী বরিস জনসনই নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী
আন্তর্জাতিক ডেস্ক০-
তার ইসলামবিদ্বেষী মনোভাব আগে থেকেই বিশ্বে আলোচিত, এমনকি হ্যালোইনের আগেই চুক্তিসহ বা বিনাচুক্তিতেই ইউরোপ থেকে ব্রিটেনকে বের করা ব্রিটিশ দলের নেতৃত্ব দেয়া বরিস জনসনই হচ্ছেন থেরেসা মে’র উত্তরসূরি। মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের কনজার্ভেটিভ দলের নেতৃত্ব নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে পরবর্তী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হচ্ছেন প্রকাশ্য ইসলামবিদ্বেষী আলেক্সান্ডার বরিস দে ফেফেল জনসন বা বরিস জনসন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে হ্যালোইনের আগেই চুক্তিভিত্তিক বা বিনাচুক্তিতে ব্রিটেনকে বের করার নেতৃত্ব দেয়ায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বরিস জনসন। তার বিজয় যুক্তরাজ্যকে নিজ দেশে এক সাংবিধানিক সংকট ও ব্রেক্সিট শোডাউন নিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে একটি সংকটের দিকে ঠেলে দিবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা। ব্রিটিশ সাংসদরা কোন ধরনের বিচ্ছেদ চুক্তি ছাড়া ইইউ থেকে যে সরকারই ব্রিটেনকে বের করতে চাইবে, সেই সরকারের পতন ঘটাতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
২০১৬ সালের ব্রেক্সিট গণভোটের পরিচিত মুখ জনসন কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব নির্বাচনের ভোটে ৯২,১৫৩ সদস্যের ভোট পায়, অন্যদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ও দেশটির পররাষ্ট্র সচিব জেরেমি হান্ট পেয়েছেন ৪৬,৬৫৬ ভোট। বুধবার (২৪ জুলাই) বর্তমান প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বরিস জনসনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য বাকিংহাম প্রাসাদে যাবেন রানী এলিজাবেথের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। বাকিংহাম প্রাসাদেই রানী আনুষ্ঠানিকভাবে ডাউনিং স্ট্রিটে জনসনকে নিয়োগ করবে। ব্রিটিশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অবস্থিত এই ডাউনিং স্ট্রিটেই।
এই ফলাফলটি ব্রিটেনের ইতিহাসে অতিরঞ্জিত এক রাজনীতিবিদের জন্য এক দুর্দান্ত বিজয় নিয়ে আসে। ২০১৬ সালে ইইউ থেকে ব্রিটেনের বের হওয়া নিয়ে ব্রিটেনে সংকট সৃষ্টির পর জনসনের ক্ষমতা গ্রহণই প্রথম পদক্ষেপ। ৫৫ বছর বয়সী এই নেতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের ব্রিটিশ ইতিহাসের সবচেয়ে স্পর্শকাতর সময়টিতেই নির্বাচিত হলেন। থেরেসার পদত্যাগের পর দল নেতৃত্বশূন্য হয়, কনজারভেটিভ নেতাই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হন।
১৯৬৪ সালের ১৯ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরের ম্যানহাটনে এক ব্রিটিশ দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় বরিস জনসন। জনসন তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা, সোনালী চুল, ফুলেলে কথোপকথন ও নীতিগত প্রক্রিয়ায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য পরিচিত। এছাড়াও বিশ্বে একজন প্রভাবশালী ও স্পষ্ট ইসলামি বিদ্বেষী হিসেবে একাধিকবার শিরোনাম হয়েছেন তিনি।
মিথ্যাবাদী বরিস
অক্সফোর্ড থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে ১৯৮৭ সালে টাইম পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন বরিস। কিন্তু, মাত্র এক বছরের মাথায়ই রাজা এডওয়ার্ড-২ এবং তার সমকামী প্রেমিকা নিয়ে মিথ্যা মন্তব্য করার দায় চাকরি হারান। ২০১৩ সালে বিবিসি টেলিভিশনের এক অনুষ্ঠানে এই স্মৃতি মনে করে বলেছিলেন, ‘এটা বিব্রতকর ছিল–আমার ভেতর এক গভীর লজ্জা ও পরিতাপ অনুভূত হয় এই ঘটনা মনে করলে’।
২০০৪ সালে ব্রিটিশ সাংসদ হবার পরেও একবার মিথ্যাবাদী হিসেবে ফের আলোচিত হন বরিস। তৎকালীন কনজারভেটিভ দলের নেতা মিকায়েল হাওয়ার্ড বিবাহ বহির্ভূত একটা সম্পর্ক নিয়ে মিথ্যা বলার দায়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ছায়ামন্ত্রী ও কনজারভেটিভ দলের সহ-সভাপতির পদ থেকে বরিসকে বহিস্কার করেছিলেন।
জীবদ্দশায় একাধিক দুর্নাম অর্জন করেছেন বরিস। মুসলিম নারীদের বোরকা নিয়ে মন্তব্য করা, তার নিজের প্রকাশিত এক গ্রন্থে ইসলামকে আরব বিশ্বের উন্নতির অন্তরায় এবং বিশ্বের অধিকাংশ সংঘাতের পেছনে ইসলামকে যুক্ত করে করা মন্তব্যের জেরে বিশ্বব্যাপী একাধিকবার সমালোচিত হয়েছেন বিশ্বের ঐতিহ্যবাদী রাষ্ট্র যুক্তরাজ্যের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
আরও পড়ুন : ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ইসলাম বিদ্বেষী মন্তব্যে নিন্দার ঝড়
এছাড়াও, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের ফাঁস হওয়া ই-মেইল নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্বে তার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ব্রিটিশ রাজনীতিবিদরা। ট্রাম্প ও তার প্রশাসন নিয়ে সমালোচনা ই-মেইল ফাঁস হলে অতি সুসজ্জিত রাষ্ট্রদূতকে যাচ্ছেতাই ভাবে গালমন্দ করেন ট্রাম্প, যার প্রতিবাদ করে সমালোচিত হয়েছিলেন থেরেসাও, সেই ঘটনায় বরিসের ভূমিকাকে অনেকেই ট্রাম্পের প্রতি প্রভুভক্ত হিসেবেই মন্তব্য করেছেন।
এক উগ্রবাদী ডানপন্থী ট্রাম্পের প্রভাবেই বিশ্বের সর্বত্র এক উত্তেজনা বিরাজ করছে, সেখানে বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম পরাশক্তি যুক্তরাজ্যের ক্ষমতায় ও যদি বরিসের মতো মানুষ বসে যায় তাহলে বিশ্বশান্তি যে এক ভয়াবহ সংকটে পরতে যাচ্ছে তা অনেকটাই নিশ্চিত। অন্তত যুক্তরাজ্যে অবস্থিত মুসলিমরা যে বরিসের শাসনে খুব একটা শান্তিতে থাকবে না, তা পরিসংখ্যান কিছুটা ধারণা আগেই দিয়েছে।