বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই ২০১৯
প্রথম পাতা » অপরাধ | রাজনীতি » মন্ত্রীর কাছেও বিচার পাননি প্রিয়া সাহা: রানা দাশগুপ্ত
মন্ত্রীর কাছেও বিচার পাননি প্রিয়া সাহা: রানা দাশগুপ্ত
ঢাকা, ২৫ জুলাই- পৈতৃক ভিটায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেও বিচার পাননি প্রিয়া সাহা-এমনটাই দাবি করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশ গুপ্ত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রিয়া সাহার সাক্ষাৎ ও সাক্ষাৎকার’ বিষয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সংগঠনের পক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, প্রিয়া সাহার পৈতৃক বাড়িটি অগ্নিসংযোগে ধ্বংস করা হয়েছে চলতি বছরের মার্চ মাসের দিকে। এটি সত্য। এ ঘটনার বিচার পেতে প্রিয়া সাহা আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রীর দারস্ত হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বিচার পাননি। এ কারণে তার মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হতে পারে।
তিনি বলেন, প্রিয়া সাহার পৈতৃক বাড়ি যে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল, এটি সত্য। বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এ সংবাদ যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়।
রানা দাশগুপ্ত অভিযোগ করেন, প্রিয়া সাহা সরকারের বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে গিয়েছেন। আমার সামনেই শহীদ মিনারে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম কাছে বিচার চেয়েছিলেন। কিন্তু রেজাউল করিম সাহেব সম্মানজনকভাবে তার সঙ্গে কোনো কথা বলতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। এগুলো আমার চোখের সামনে হয়েছে।
তিনি বলেন, ব্যক্তির যদি ঘর-বাড়ি জ্বলে থাকে, তাও আবার মানবাধিকার কর্মী প্রিয়া সাহার পৈতৃক বাড়ি, সাধারণ হিন্দু বৌদ্ধ-খ্রিস্টানদের কথা বাদ দেন। আপনারা নিজেদের কথা বিবেচনা করেন, আপনাদের বাড়ি-ঘর যদি জ্বালিয়ে দেয়া হতো? বিচার চাওয়ার পরও কোথাও বিচারের মুখোমুখি না হতেন, আপনাদের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ হতো কি- না?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহার অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রিয় সাহা সংগঠনের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন, এটি সত্য। তবে সাংগঠনিক কোনো সিদ্ধান্ত বা দায়িত্ব নিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাননি বা মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। যা করেছেন, নিজ দায়িত্বে করেছেন। এর সঙ্গে সংগঠনের কোনো সম্পর্ক নেই।
তিনি বলেন, আমন্ত্রিত হয়ে সংগঠনের তিন সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রে যায়। এঁদের মধ্যে ছিলেন উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অশোক বড়ুয়া, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্মল রোজারিও ও প্রিয়া সাহা। তিনি ছাড়া বাকি দুজন ২১ জুলাই দেশে ফিরে আসেন।
প্রিয়া সাহা সম্প্রতি ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ থেকে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ‘ডিজএপিয়ার’ হয়ে গেছেন। তাঁর এমন বক্তব্য নিয়ে সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আজকের সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এ প্রসঙ্গে রানা দাশগুপ্ত বলেন, প্রিয়া সাহা ‘ডিজএপিয়ার’ বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন, তিনিই ভালো বলতে পারবেন। এটি যদি স্বাধীন বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের গুম বা নিখোঁজ অর্থে বলে থাকেন, তবে তা অসত্য। তাঁরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
রানা দাশগুপ্ত আরও বলেন, প্রিয়া সাহার বক্তব্য নিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চলছে। ব্যক্তির বক্তব্যকে পুঁজি করে সম্প্রদায় বিশেষকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা হচ্ছে। এটা দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক।
সংবাদ সম্মেলনে রানা দাশগুপ্ত বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার অতীতের তুলনায় এখন কিছুটা কম। তবে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার অব্যাহত আছে।
পাকিস্তান আমল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সরকারি তথ্য-উপাত্ত দেখিয়ে রানা দাশগুপ্ত বলেন, দেশে হিন্দু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমছে।
রানা দাশগুপ্ত দাবি করেন, অতীতে হিন্দু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমলেও গত এক দশকে আওয়ামী লীগের শাসনামলে হিন্দু জনগোষ্ঠী ৮ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থে সংখ্যালঘুর সমস্যা পাশ না কাটিয়ে তা ইতিবাচকভাবে মোকাবিলা করা উচিত। প্রিয় সাহার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ঘোলা পানিতে যাতে কেউ মাছ শিকার না করতে পারে, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে রানা দাশগুপ্ত বলেন, আজ পর্যন্ত প্রিয়া সাহার সাথে আমার কোনও কথা হয়নি। প্রিয়া সাহা কবে বাংলাদেশে ফিরবেন এ সম্পর্কে সাংগঠনিকভাবে আমাদের কিছু জানা নেই।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য নিমচন্দ্র ভৌমিক, কাজল দেবনাথ, বাসুদেব ধর, নির্মল রোজারিও প্রমুখ।
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল