শনিবার, ২৭ জুলাই ২০১৯
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | জেলার খবর » ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশও পাওয়া যাচ্ছে হাকালুকি হাওরে
ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশও পাওয়া যাচ্ছে হাকালুকি হাওরে
পক্ষকাল সংবাদ-
তিন বছর আগে মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরে বেশ ইলিশ ধরা পড়েছিল। মাঝখানে আর তেমন দেখা মেলেনি। তবে এবার আবারও জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ছে। স্থানীয় হাটবাজারে তা বিক্রিও হচ্ছে। মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন নদ-নদী ও হাওরে মিঠাপানিতে ইলিশের আবাসস্থল গড়ে উঠেছে। এ কারণে হাকালুকিতে এ মাছের দেখা পাওয়া যাচ্ছে।
মৎস্য বিভাগ ও এলাকাবাসী জানান, হাকালুকি হাওরটি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা এবং সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলাজুড়ে বিস্তৃত। প্রায় ২৮ হাজার হেক্টর আয়তনের হাওরটি দেশের বৃহত্তম। সম্প্রতি অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামার কারণে হাওর পানিতে পরিপূর্ণ। স্থানীয় জেলেরা প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের জাল দিয়ে হাওরের ভাসান পানিতে মাছ ধরেন। দেশি প্রজাতির বিভিন্ন মাছের সঙ্গে তাঁদের জালে ইলিশও উঠছে। ২০১৬ সালে এই হাওরে প্রচুর ইলিশ পাওয়া গিয়েছিল।
কুলাউড়া-জুড়ী সড়কের আছুরিঘাট সেতুর কাছে প্রতিদিনই স্থানীয় জেলেরা হাওর থেকে ধরা বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ নিয়ে বসেন। গত মঙ্গলবার সকালের দিকে সেখানে গিয়ে সাতটি ইলিশের দেখা মেলে। সেগুলোর ওজন ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম। জেলে চান মিয়া বললেন, গত সোমবার রাতে হাওরে কয়েকজন মিলে বেড়জাল টেনে মাছ ধরছিলেন। এক টানে সব মাছ ওঠেনি। পাঁচবার জাল টেনে সাতটি মাছ মেলে। কয়েক দিন ধরে অনেকের জালেই ধরা পড়ছে।
চান মিয়া সাতটি ইলিশের দাম হাঁকেন চার হাজার টাকা। তিন-চারজন ক্রেতা দর-কষাকষি করছিলেন।
ইলিশ কিনতে আসা কুলাউড়ার ব্যবসায়ী মারুফ আহমদ বলেন, ‘বাজারে বাইরের ইলিশ মেলে। তাজা থাকে না। বরফ দেওয়া থাকে। এইখানে প্রায়ই হাওরের মাছ কিনতাম আই। আইজ ইলিশ দেখলাম। দেখতে তাজা লাগের। দরদামে হইলে কিনমু।’
এলাকাবাসী জানান, শুধু আছুরিঘাট নয়, কুলাউড়াসহ আশপাশের জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারেও হাকালুকি হাওরের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে।
কুলাউড়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ বলেন, তিনিও সম্প্রতি আছুরিঘাটে বেশ কিছু ইলিশ দেখেছেন। অতিবৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢল নামার কারণে হাওরসহ নদ-নদীতে পানি বেড়ে গেছে। মেঘনা ও কুশিয়ারা নদী হয়ে ইলিশ হাওরে ঢুকে পড়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিকস বিভাগের অধ্যাপক ও মৎস্য জাদুঘরের পরিচালক মোস্তফা আলী রেজা হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, একধরনের ইলিশ সমুদ্রে থাকে, সেখানেই ডিম ছাড়ে। আরেক ধরনের ইলিশ নদ-নদী ও হাওরের মিঠাপানিতে থাকে ও ডিম ছাড়ে। আর অন্যটি থাকে সমুদ্রে, ডিম ছাড়ে মিঠাপানিতে। সরকার জাটকা নিধন বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে ইলিশ বেশি পাওয়া যাচ্ছে। আবার বন্যা, সুস্থ পরিবেশ ও খাবারের প্রাচুর্যের কারণেও ইলিশের প্রজনন বাড়তে পারে। তিনি বলেন, পানিতে দুর্গন্ধ থাকলে, অক্সিজেন না থাকলে ইলিশ ডিম ছাড়বে না। বাচ্চা মরে যাওয়ার আশঙ্কায় তারা পেটে ডিম রেখে দেয়। পেটেই ডিম বিলুপ্ত হয়ে যাবে। হাওরে এখন ধানের প্রচুর আবাদ হয়। এতে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। বিল শুকিয়ে মাছ ধরা হয়। এতে জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেখানকার পরিবেশ রক্ষা করতে পারলে ইলিশ বাড়বে।