শনিবার, ২৭ জুলাই ২০১৯
প্রথম পাতা » জেলার খবর | ব্রেকিং নিউজ » আটকে পড়া ট্রেনেই বন্যায় ঘরহীন মানুষের প্রধান আশ্রয়স্থল
আটকে পড়া ট্রেনেই বন্যায় ঘরহীন মানুষের প্রধান আশ্রয়স্থল
পক্ষকাল সংবাদ-
গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাদিয়াখালী স্টেশন এলাকা। স্টেশনে থেমে আছে একটি ট্রেন। নাম পদ্মরাগ মেইল। রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এ পথে ট্রেন চলছে না। এ কারণে ট্রেনটি আটকা পড়েছে এখানে। তাই বলে ট্রেনটি ফাঁকাও নেই। এর ভেতরে আশ্রয় নিয়েছে বন্যায় ঘরহীন মানুষেরা।
ওই ট্রেনে আশ্রিতদের একজন শেফালী খাতুন। তিনি জানালেন, হঠাৎ বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি। আঙিনায় প্রবল স্রোত। এক ঘণ্টার ব্যবধানে ঘরের মেঝেয় বুকপানি। চোখের সামনে ভেসে গেল ধান-চাল-ডালসহ খাবার-দাবার, কাপড়চোপড়। অনেক কষ্টে দুই মাসের সন্তানকে নিয়ে পদ্মরাগ ট্রেনে আশ্রয় নেন তিনি। ১০ দিন ধরে এখানেই থাকা-খাওয়া।
শুধু শেফালী নন, ওই ট্রেনের একই কামড়ায় আশ্রয় নিয়েছে ১৬টি পরিবার। পুরো ট্রেনে আশ্রিত মানুষের সংখ্যা দুই শতাধিক। তাঁরা জানান, এই ট্রেন না থাকলে তাঁদের খোলা আকাশের নিচে থাকতে হতো। তাঁদের কাছে এখনো সরকারি ত্রাণও পৌঁছায়নি।
স্টেশন এলাকার বাসিন্দারা জানান, গাইবান্ধায় বাঁধ ভাঙার কারণে চারটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের সোনালী বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বাদিয়াখালী ইউনিয়নে পানির চাপ বাড়ে। ফুলছড়ি উপজেলায় কয়েকটি জায়গায় বাঁধ ভাঙায় এ ইউনিয়নের পূর্বদিকে পানির ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়। ১৭ জুলাই রেলপথের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে শুরু করে। তখন থেকে এ পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ। এদিন বগুড়ার সান্তাহার থেকে লালমনিরহাটগামী পদ্মরাগ ট্রেনটি বাদিয়াখালী স্টেশন এলাকায় ২ নম্বর রেলগুমটি এলাকায় আটকে যায়।
এ ট্রেনের আশ্রিত শেফালী খাতুনের বাড়ি রিফাইতপুর। তিনি বলেন, তাঁর স্বামী লাবলু মিয়া দিনমজুর। এখন কোনো কাজ নেই। ১০ দিন ধরে ট্রেনে আশ্রয় নিয়ে ধার করে খাচ্ছেন তাঁরা। এখন আর কেউ ধারও দিতে চান না। দুই মাস বয়সী সন্তানকে নিয়ে তিনি চরম সংকটে পড়েছেন।
একই ট্রেনে আশ্রয় নেওয়া সুমি বেগমের বাড়িও রিফাইতপুরে। গতকাল ডুবে যাওয়া বাড়ি থেকে এক বস্তা চাল নিয়ে এসেছেন তাঁর স্বামী। কিন্তু পচে গন্ধ বের হয়েছে। খাওয়ার মতো অবস্থায় নেই। সুমি বললেন, ‘১০ দিন হলো একবেলা খেয়ে বেঁচে আছি। মরে যাওয়ার পর সরকারি ত্রাণ এসে কী হবে?’
ট্রেনের ভেতর গিয়ে দেখা যায়, আসনের নিচে ছোট ছোট বিছানা করে শোয়ার ব্যবস্থা করেছে বানভাসিরা। দিনের বেলায় সেখানে শুধু নারীদের দেখা মেলে। তাঁরা রান্না করছেন ট্রেনের মধ্যেই।
ময়না বেগম দাঁড়িয়ে ছিলেন ট্রেনের কাছে। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করি বানের পানি এসে ঢুকে পড়ল। তাড়াহুড়ো করে কয় সের চাল নিয়ে আচ্চিলাম। সেটা তো শ্যাষ হয়্যা গেল। এখন ইলিপও পাচ্চি না। ক্যাংকা করি বাঁচি।’ এমন বক্তব্য অন্তত ২০ জন নারী-পুরুষের।
স্টেশনের ২ নম্বর রেলগুমটি এলাকার পাশেই বাদিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. সাফায়েতুল হকের বাড়ি। ত্রাণের বিষয়ে জানতে তাঁর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি মুঠোফোন ধরেননি।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় মুঠোফোনে বলেন, ‘রেললাইন তো বাদিয়াখালী ইউনিয়নের পাশেই। দুই দিন আগেই ওই ইউনিয়ন পরিষদে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। সেখানকার বাসিন্দারা ত্রাণ পাননি, এমন বিষয় কেউ আমাকে জানাননি। তবে তাঁদের ত্রাণ পাওয়ার বিষয়ে আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি।’