শনিবার, ২৭ জুলাই ২০১৯
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » কানাডায় বিচারপতি এসকে সিনহার আবেদনের শুনানী আগামী মাসে
কানাডায় বিচারপতি এসকে সিনহার আবেদনের শুনানী আগামী মাসে
টরন্টো, ২৬ জুলাই- বাংলাদেশের সাবেক বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনের শুনানী আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হবে। যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন দীর্ঘদিন ঝুলে থাকায় তিনি ও তাঁর স্ত্রী সুষমা সিনহা কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। আবেদনে বাংলাদেশে এই সাবেক প্রধান বিচারপতি ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে সরকারের সঙ্গে টানাপড়েনের প্রসঙ্গ টেনেছেন।
সিনহা দাবি করেছেন, ২০১৭ সালের ২ জুলাই এক বৈঠকে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে মামলায় ‘সরকারের পক্ষে’ রায় দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তাতে রাজি না হওয়ায় তাকে দেশ ছাড়তে হয়েছে।
এ বিষয়ে টরন্টো থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা দি স্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসকে সিনহা বলেন, ‘আমাকে টার্গট করা হয়েছে কারণ বিচারক হিসেবে আমি ছিলাম একজন অ্যাকটিভিস্ট। আমি যেসব রায় দিয়েছি তাতে আমলাতন্ত্র, প্রশাসন, রাজনীতিবিদ, এমনকি সন্ত্রাসীরাও ক্ষিপ্ত হয়েছে। আমি এখন নিজের দেশেই অবাঞ্ছিত’।
এস কে সিনহার অভিযোগের বিষয়ে কানাডায় বাংলাদেশ হাই কমিশনারের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে হাইকমিশনার মিজানুর রহমান বলেছেন, দেশ ছাড়ার পর থেকেই তিনি (সিনহা) সরকারের সম্পর্কে এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে আসছেন, যেগুলো সঠিক নয়। তার দেশে ফেরার ক্ষেত্রেও কোনো বাধা বা হুমকি নেই। এসব কথা তিনি বলছেন শুধু তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের দাবি পোক্ত করার জন্য।
জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে বিচারপতি সিনহা তেমন একটা ইতিবাচক সাড়া পাননি। তরুণ এক ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এবং বিচারপতি সিনহার বক্তব্য ‘সন্তোষজনক নয়’ বলে জানিয়ে তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্য রিফিউজি বিষয়ক আদালতে পাঠিয়ে দেন। এরপর আর তার আবেদনের কোনো অগ্রগতি হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রে কেবলমাত্র এসকে সিনহা রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু কানাডায় তার সঙ্গে তারও স্ত্রীও আবেদন করেছেন।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি হিসেবে এবং তাকে ঘিরে ঘটনা প্রবাহের কারণে কানাডায় আবেদন করার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক আশ্রয়ের ব্যাপারে ‘টেবিল ডিসিশন’ হয়ে যাবে, অনেকে এমন ধারণা করলেও বিচারপতি সিনহার ক্ষেত্রে সেটি ঘটেনি। এক মাস পর শুনানির তারিখ দেওয়া হয়েছে তাকে।
জানা যায়, তৃতীয় নিরাপদ কোনো দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করা হলে তিনি কানাডায় প্রবেশের অনুপযুক্ত হবেন মর্মে একটি নতুন আইন হয়েছে। সেই আইনের বিধিতে বিচারপতি সিনহা রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার যোগ্য নন। এর পরও তার আবেদনপত্র গ্রহণ করে শুনানির সুযোগ দেওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অভিজ্ঞজনেরা।
উল্লেখ্য, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এসকে সিনহার সঙ্গে শাসক দলের বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। ওই রায়ে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি অপসারণে জাতীয় সংসদের ক্ষমতা বাতিল করা হয়। এর পর ক্ষমতাসীনরা বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেন। এতে চাপে পড়ে একপর্যায়ে তিনি ছুটিতে যান। এর পরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। ২০১৭ সালের ১৭ নভেম্বর তিনি বিদেশ থেকে পদত্যাগপত্র দাখিল করেন। ঢাকা থেকে প্রথমে তিনি সিঙ্গাপুর যান। এর পর অস্ট্রেলিয়া হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। গত ৪ জুলাই নায়াগ্রার সন্নিকটে ফোর্ট এরি সীমান্ত হয়ে সিনহা কানাডায় প্রবেশ করেন এবং সেখানে তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন জমা দেন।