ডুবছে দেশ, বাড়ছে বিদ্যুৎ ভোগান্তি
পক্ষকাল ডেস্ক-২৭ জুলাই- টানা ২০ দিনের বন্যায় পানিবন্দি মানুষের বেড়ে চলেছে বিদ্যুৎভোগান্তিও। আর বন্যাদুর্গত এলাকায় চাইলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করতে পারছে না পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। এসব এলাকায় বন্যার পানিতে বিদ্যুতের লাইন হেলে পড়েছে। পানি না কমলে এসব এলাকার সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না।
আরইবির একজন কর্মকর্তা বলেন, কিছু কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। এখন চাইলেও এসব লাইন সংস্কার করতে পারছি না। পানি কমলে বিদ্যুতের লাইন সংস্কার করেই বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা হবে। তিনি বলেন, আমরা দেখছি। পানি কমলে বিদ্যুৎ লাইনে কোনও সমস্যা না থাকলে আমরা সেসব জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করবো।
দেশের বন্যা পরিস্থিতি বলছে, নতুন করে পানি না এলে এই পানি কমতে আরও সপ্তাহের বেশি সময় লাগবে। বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন মানুষকে আরও প্রায় ১৫ দিন অন্ধকারে থাকতে হবে।
আরইবি সূত্র জানায়, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, জামালপুর. কুড়িগ্রাম, মানিকগঞ্জের কিছু এলাকা এবং বগুড়া ও শেরপুরের বেশিরভাগ এলাকায় পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় হয়েছে। কোনও কোনও জায়গায় পানির কারণে বিদ্যুতের খুঁটি কাত হয়ে গেছে।
জানতে চাইলে জামালপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পিবিএস) ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (কারিগরি) প্রকৌশলী সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের সাত উপজেলার মধ্যে ছয়টি উপজেলাই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় এক লাখ ২০ হাজার গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইতোমধ্যে পানি নেমে গেছিল। কিন্তু আবার পানি বাড়তে শুরু করেছে। পানির কমার পর আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া সংযোগগুলো আবার চালু করেছিলাম। এখন ৪/৫টা গ্রামে অর্থাৎ অনেক ভেতরের দিকের গ্রামগুলোয় এখনও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে। ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাহক এখনও বিদ্যুৎ পাচ্ছে না।’
প্রকৌশলী সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিদ্যুতের খুঁটির খুব ক্ষতি হয়েছে। অনেক খুঁটি হেলে গেছে। যেসব এলাকায় পানি নামছে, সেসব এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত খুঁটি মেরামতের কাজ শুরু করেছি।’
এদিকে, গত ১৬ জুলাই আরইবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, তাদের ৩১ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন রয়েছে। গত ১০ দিনের ব্যবধানে এখন বলা হচ্ছে, ৪০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। অর্থাৎ গত ১০ দিনে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন গ্রাহকের সংখ্যা বেড়েছে ৯ হাজার।
গত ১৬ জুলাই আরইবি রংপুর-১ও ২, দিনাজপুর-১ ও ২, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, বগুড়া-১ ও ২, টাঙ্গাইলে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হওয়ার কথা জানিয়েছিল। তবে, এরমধ্যে রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, টাঙ্গাইলের বন্ধ থাকা বেশিরভাগ লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। তখন ৩৫০ কিলোমিটার লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকার কথা জানানো হয়েছিল। এখন বলা হচ্ছে, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে আরইবির ৪৫০ কিলোমিটার লাইন। অর্থাৎ পুরাতন লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হলেও নতুন নতুন এলাকা তলিয়ে গেছে পানির তোড়ে।
আরইবির এক কর্মকর্তা বলেন, গত কয়েকদিন পানি স্থিতিশীল অব্স্থায় আছে। বাড়ছে না, কমছেও না। আর পানি না কমলে বিদ্যুৎও সরবরাহ করা যাচ্ছে না। জামালপুর ও শেরপুরের অবস্থা এখন সব চেয়ে খারাপ।
জানতে চাইলে শেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পিবিএস) জেনারেল ম্যানেজার মাসরুল হক খান বলেন, ‘আমাদের মোট গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ ত্রিশ হাজার। এরমধ্যে বন্যায় প্রায় সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন পানি নামতে শুরু করায় ১৫ থেকে ১৬টি ট্রান্সফরমার আমরা বন্ধ রেখেছি। ফলে সেসব এলাকার গ্রাহকরা এখনও বিদ্যুৎ পাননি।’ তিনি বলেন, ‘অনেক এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি হেলে গেছে।’ যেসব এলাকার পানি নেমেছে সেসব এলাকায় বিদ্যুৎলাইন ও খুঁটি মেরামতের কাজ চলছে বলেও তিনি জানান।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন