শনিবার, ২৭ জুলাই ২০১৯
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » খালেদা জিয়ারখালেদা জিয়ার জিবে আলসার, এক সাপ্তাহে ওজনও কমেছে ৪ কেজি: মির্জা আলমগীর
খালেদা জিয়ারখালেদা জিয়ার জিবে আলসার, এক সাপ্তাহে ওজনও কমেছে ৪ কেজি: মির্জা আলমগীর
পক্ষকাল ডেস্ক : খালেদা জিয়ার জিবে আলসার হয়েছে। গত এক সাপ্তাহে তার(খালেদা জিয়া) ওজনও কমেছে ৪ কেজি ওজন । ইট ইজ ভেরি এলার্মিং। আপনারা(সাংবাদিকরা) ম্যাডামকে দেখলে এখন চিনতেই পারবেন না। উনি শুঁকিয়ে এরকম হয়ে গেছেন। উনি খেতে পারছেন না, কিছুই খেতে পারছেন না।” এসময় তার শারীরিক অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ অবিলম্বে তার পছন্দ অনুযায়ী দেশে অথবা বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানায় বিএনপি।
শুক্রবার বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নিয়ে এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের কাছে এই দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘‘আমি সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি অবিলম্বে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। তার পছন্দ অনুযায়ী দেশে অথবা বিদেশে যেখানে তিনি চিকিৎসা করাতে চান সেখানে তার চিকিৎসার করার ব্যবস্থা করুন ।”
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ পিজিতে আনার পর আপনারা দেখেছেন যে, তিনি(খালেদা জিয়া) হুইল চেয়ার ছাড়া মুভই করতে পারছেন না। প্রকৃত অবস্থা আরো ভয়াবহ। তিনি এখন বিছানা থেকে নিজে উঠতে পারেন না। তাকে দুইজন হেলফ করে উঠাতে হয় এবং হুইল চেয়ারে বসিয়ে তাকে টয়লেটে, ওয়াসরুমে বা খাবার টেবিলে নিতে হয়। আবার দু্‘জনের সাহায্য নিয়েই তাকে শোয়া বা বিছানায় নিতে হয়।”
‘‘ এটা অমানবিক। এটা আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারি না যে একজন সাবেক প্র্রধানমন্ত্রী যিনি গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন,লড়াই করেছেন, যে দুইবার বিরোধী দলের নেতা ছিলেন। যার স্বামী স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন এবং যিনি নিজে পাকিস্তান সেনা বাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন তার দুই সন্তানসহ। আজকে চরম অমানবিক আচরণ তার সঙ্গে করা হচ্ছে। একজন প্রথম শ্রেনীর প্রাপ্ত কয়েদীর সঙ্গে যে আচরণ করা হয় তার সঙ্গে তার চেয়েও খারাপ আচরণ করা হচ্ছে।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘ তাকে এ্রখন সঠিক মতো তার যে খাওয়া সেগুলো ঠিকভাবে দেয়া হয় না। তার যে সমস্ত ফল-মূল যেগুলো খাওয়া উচিত সেগুলো তিনি ঠিক মতো পান না। সবচেয়ে বড় হচ্ছে তার চিকিৎসা -এটা কোনো মতেই এখানে(বিএসএমএমইউ) সম্ভব হচ্ছে না।”
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ আমরা দেশনেত্রীর খবর রাখি, খবর রাখার চেষ্টা করি। তার এখন যে সমস্যাগুলো দেখা দিয়েছে- তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি উনি কষ্ট পাচ্ছেন সেটা হচ্ছে- তার জিবের মধ্যে আলসার হয়েছে যেটাকে টাং আলসার বলে।”
‘‘ অন্যদিকে তার দাঁত সার্প(চোখা) হয়ে গেছে। সেটা যখন তার জিবে আঘাত করে তখনই তিনি কষ্ট পান। যার ফলে তিনি এ্খন কিছু খেতেও পারছেন না। এই বিষয়টা ধরার পড়ার পরে সেখানকার চিকিসকরা টুথ ব্রান্ডিং করেছিলেন যাতে সার্পনেসটা কমিয়ে এনেছিলেন। এখন তার দাঁতের সার্পনেস আরো বেশি করে দেখা দিয়েছে।”
তিনি বলেন, ‘‘ দেশনেত্রীর দাঁতের চিকিৎসাটা বড় চিকিৎসা। তার রুট ক্যানেল করা দরকার, স্কেলিং করা দরকার, টুথ এসট্রাকংশ করা দরকার। দুই-একটা দাঁত তার নষ্ট হয়ে গেছে বয়সের কারনে সেগুলো তুলে ফেলা দরকার।”
খালেদা জিয়ার ‘ব্লাড সুপার’ ইনসুলিন নেওয়ার পরও নামছে না বলে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ উনি ডায়াবেটিকসের তিনটা ঔষধ খাচ্ছেন তারপরও কিছুইতে তা ২০ এর নিচে নামছে না। যেটা অত্যন্ত এলার্মিং।”
‘‘ যার ফলে মুখের জিবে যে আলসার হয়েছে এটা আরো বাড়ছে। আপনারা জানেন যে এই ধরনের রোগগুলো দ্রুত বাড়তে থাকে।” আর্থারাইটিস, ফ্রোজেন সোল্ডার প্রভৃতি রোগে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের আরো অবণতি ঘটেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ফখরুল বলেন, ‘‘ ম্যাডামের ব্যাপারটা দলের সবাইকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে, পরিবারকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে, দেশের মানুষকে উদ্বিগ্ন করেছে। আমি বুঝতে পারি না দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে এই আচরণের উদ্দেশ্যটা কী? তাকে কী এই আচরণের মধ্য দিয়ে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া? রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে কী তাকে একেবারে জীবন অবসানের চেষ্টা করা। এই প্রশ্নগুলো তো মানুষের মধ্যে এসে যাচ্ছে।
‘‘ আপনারা দয়া করে এই বিষয়টাকে একটু গুরুত্ব দিয়ে জনগনের সামনে, সরকারের সামনে তুলে ধরেন। যাতে করে এই নেত্রী, তিনি জনগনের নেত্রী তিনি ডিজার্ভ করে ভালো ট্রিটমেন্ট যেন পান। আমরা পরিস্কার করে বলতে চাই, আমরা শিগগিরই তার মুক্তি চাই, যে মুক্তিটা তার প্রাপ্য। আজকে সরকার তার জামিনে প্রত্যেকটা বাঁধার সৃষ্টি করে যাচ্ছে। সরকার এই বাঁধাটা সৃষ্টি করছে।”
ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘‘ আপনারা খেয়াল করে দেখবেন ৩ সাপ্তাহ আগে ম্যাডামের টুথ গ্রান্ডিং করা হয়েছিলো। তার দাঁতের সার্পনেসটা কমিয়ে দেয়া হয়েছিলো। গত ১৫দিন যাবত অর্থা গত ৬/৭ তারিখে রেফার্ড দেয়া হয়েছিলো ডেন্টাল ডিপার্টমেন্টে কল করা হয়েছিলো। তারা গত পরশুদিন উনাকে তাকে দেখেছেন। ‘এ’ ব্লক থেকে কেবিন ব্লকে যেতে যদি ডাক্তার কল দিলে ১০দিন সময় লাগে তাহলে এই ধরনের রোগী প্রতি এই ধরনের আচরণ এটা কী ইন্ডিকেট করে।”
‘‘ ডেন্টাল ডিপার্টমেন্ট এ ব্লকের চার তলায়। সেখানে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে আপনারা সাংবাদিকরা একবার ঘুরে আসলে দেখতে পারেন যে, সত্যিকার অর্থে কি আছে……। ম্যাডামের মতো ৭৫ বছরে নেত্রীর যদি কোনো না কোনো সমস্যা হলে জরুরীভাবে ম্যানেজ করবে কিভাবে। সেখানে কি সুযোগ-সুবিধা আছে?”
বিএসএমএমইউতে খালেদা জিয়ার দাঁতে সুচিকিসার আধুনিক যন্ত্রপাতি আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, আবদুল মঈন খান, সে্লিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ গত ১ এপ্রিল থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাকে কেবিন ব্লকের ৬২৫ নং কক্ষে রাখা হয়েছে। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারিতে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট মামলায় বিশেষ জজ আদালত ৫ বছরের সাজা দেয়ার পর থেকে পুরনো ঢাকার নির্জন কারাগারে বন্দি রয়েছেন তিনি। এর পর থেকে তিনি নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন হুইল চেয়ারে করে তাকে চলতে হচ্ছে।