সরকারে!সাধারণ সম্পাদক থাকতে পারবেন না
পক্ষকাল ডেস্ক - আগামী অক্টোবরে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন। সম্মেলন ঘিরে সারা দেশে দলটির নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। তাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা। তবে পদপ্রত্যাশী ও পদে থাকা নেতারা রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড এবার দলকে সরকার থেকে কার্যকরভাবে পৃথক করার উদ্যোগ নিয়েছে। সে ক্ষেত্রে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের হারাতে হতে পারে বর্তমান দলীয় পদ। মন্ত্রিপরিষদে নেই, এমন নেতাদের দিয়ে ঢেলে সাজানো হবে আওয়ামী লীগকে। এতে যাঁরা সরকারে নেই তাঁদের ভাগ্য খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাঁরাই পাবেন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের গুরুত্বপূর্ণ পদ। গণভবন সূত্র ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।
সভাপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে ঠিক রেখে কে আসতে পারেন বাকি নেতৃত্বে—এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। আওয়ামী লীগের ভেতর-বাইরে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো সাধারণ সম্পাদক পদ। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী। এ পদে ওবায়দুল কাদের অথবা তাঁর পরিবর্তে যেই আসুন না কেন, তিনি মন্ত্রিপরিষদে থাকতে পারবেন না—এমন পরিকল্পনা রয়েছে ক্ষমতাসীন দলটির শীর্ষ মহলের। সাধারণ সম্পাদক যেন দলের নেতাকর্মীদের জন্য সার্বক্ষণিক সময় দিতে পারেন—এই ভাবনা থেকেই পরিকল্পনাটি করা হয়েছে। আগামী অক্টোবরে জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা ভাবা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, টানা তৃতীয় দফায় সরকার গঠনের সময় এ বছর জানুয়ারিতে দলের জন্য সাধারণ সম্পাদক পদটি সার্বক্ষণিক রাখার প্রস্তাব কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে শেষ মুহূর্তে তা ভেস্তে যায়। অবশ্য তখনই শীর্ষ মহল জানিয়ে দেন, আগামী অক্টোবরে জাতীয় সম্মেলনে এ প্রস্তাব কার্যকর করা হবে। প্রস্তাব কার্যকরে যাঁর আপত্তি ছিল, তিনি বিষয়টি মেনে নেন। ওই সময় উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতাদের জানানো হয়, এই সম্মেলনের মাধ্যমে দলকে সরকার থেকে পৃথক করা হবে। কাজেই যাঁরা মন্ত্রিপরিষদে থাকবেন, তাঁদের দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হবে না। সরকারে নেই এমন নেতাদের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বিভিন্ন পদে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, দলকে সরকার থেকে পৃথক করার ভাবনা অনেক আগের। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে দলীয় ফোরামে বক্তৃতা দিয়েছেন। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, মন্ত্রিত্ব ছেড়ে বঙ্গবন্ধু দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। নেতাকর্মীদের এ দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে হবে।
আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে থাকা ১০ নেতা বর্তমান মন্ত্রিসভায় রয়েছেন। অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে এই সংখ্যা শূন্য করতে না পারলেও তা কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের আসন্ন সম্মেলন উপলক্ষে দলীয় কার্যালয় এখন জমজমাট। যাঁরা আগে মাসে একবারও কার্যালয়মুখী হতেন না, এখন তাঁরাও নিয়মিত। আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডি কার্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পদপ্রত্যাশী এসব নেতা নিয়মিত সময় দিচ্ছেন। সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি আওয়ামী লীগের এ দুই কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের ভিড় লেগেই থাকছে। একই সঙ্গে নেতাদের যাতায়াত বেড়েছে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি কর্মসূচিগুলোতেও নিয়মিত উপস্থিত থাকছেন আওয়ামী লীগের পদপ্রত্যাশী নেতারা।
জাতীয় সম্মেলনের আগে তৃণমূলকে ঢেলে সাজাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে আটটি বিভাগীয় টিম গঠন করেছেন। এক মাস আগে কাজ শুরু করেন এই টিমের নেতারা। তৃণমূল কমিটি গঠনের জন্য জেলায় জেলায় বর্ধিত সভা করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত এসব কেন্দ্রীয় নেতা।
২০১৬ সালের ২২-২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আগামী ২৪ অক্টোবর শেষ হবে বর্তমান কমিটির মেয়াদ। তার আগে জাতীয় সম্মেলন সম্পন্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সর্বশেষ গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতির বিষয়ে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন তিনি।
‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার/এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার’—স্লোগানে ২০১৬ সালের ২২-২৩ অক্টোবর দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ওবায়দুল কাদের।
সুত্র : কালের কন্ঠ