তারাঁয় খচিত ওরা তিনজন
নজরুর ইসলাম,পক্ষকাল প্রতিবেক: এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর থেকে বাংলাদেশ অপেক্ষামান দূর্বল। তার পরেও নিজেদেও সেরাটা দেখাতে কৃপনতা করেনি মোল্লা সাবিরা, মাবিয়া আক্তার ও জোহরা আক্তার রেশমারা। তাদের কর্মে গর্বিত হয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের দরবারে আরেকবার বাংলাদেশের পতাকা উড্ডয়ন করেছে ওরা তিনজন। ইরাক, সৌদী আরব, কাজাখস্তান ও উজবেকিস্তানের মতো দেশগুলোকে পেছনে ফেলেছেন তারা। এশিয়ার বড় দেশগুলোর সেরা ভারোত্তোলকদের হারিয়ে মোল্লা সাবিরা, মাবিয়া আক্তার ও জোহরা আক্তার রেশমারা জিতে নিয়েছেন রুপা ও ব্রোঞ্জপদক। দারুন এক অভিজ্ঞতা নিয়েই দেশে ফিরেছেন তারা। মোল্লা সাবিরা বলেন, ‘আমি আগেও এশিয়ার সেরা দেশগুলোর সঙ্গে খেলে পদক জিতেছি। এবারও এশিয়ার দেশগুলোর সেরা ভারোত্তোলকদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি আমরা। তাদেরকে হারিয়ে পদকও জিতেছি। বিদেশে গিয়ে পদক জেতাটা দারুন এক অভিজ্ঞতা।’
সেই ২০০২ সাল থেকে ভারোত্তোলন খেলছেন মোল্লা সাবিরা। খেলছেন আজ অবদি। অপরাজিত। কারণ ২০০২ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক জিতে আসছেন দেশসেরা অন্যতম এই মহিলা ভারোত্তোলক। কেবল দেশেই নয়, ২০০৫ সালে জর্দানের আম্মানে এশিয়ান ভারোত্তোলন চ্যাম্পিয়নশিপে রুপা জিতেই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু সাবিরার। মাঝে অনেকগুলো বছর কেটেছে। আন্তর্জাতিক অনেক আসরেই অংশ নিয়েছেন। ঝুলিতে জমা পড়েছে অনেক পদক। এবার কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত কাতার দ্বিতীয় ইন্টারন্যাশনাল কাপ ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতায় ৫৩ কেজি ওজন শ্রেণীতে রুপা জেতেন মোল্ল¬া সাবিরা সুলতানা।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত এই ভারোত্তোলক বলেন, ‘বাংলাদেশে অনেক কারণেই মেয়েরা ভারোত্তোলনে এগিয়ে আসছে না। কারণ ভারোত্তোলন খেলতে যে কারিগরি সহায়তা প্রয়োজন তা জেলাগুলোতে নেই। বাহিনীগুলোতে কারিগরি সুবিধাগুলো থাকায় ভারোত্তোলনে জেলাগুলোর চেয়ে সার্ভিসেস দলগুলোর মেয়েরাই বেশি এগিয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশকে ভালো করতে হলে চাই দীর্ঘমেয়াদী অনুশীলন। এর কোন বিকল্প নেই।’
কাতারে ১৭তম ইয়ুথ এশিয়ান ভারোত্তোলন চ্যাম্পিয়নশিপে ৪৪ কেজি ওজন শ্রেণীতে অংশ নিয়ে রুপা জেতেন উদিয়মান ভারোত্তোলক জোহরা আক্তার রেশমা। আন্তর্জাতিক আসরে এই প্রথম কোন পদক জেতা নয় রেশমার। এর আগেও ২০১১ সালে থাইল্যান্ডের পাতায়ায় ৪৪ কেজি ওজন শ্রেণীতে ইয়ুথ এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জপদক জেতেন তিনি। ২০১৩ সালে মালয়েশিয়াতেও একই ওজন শ্রেণীতে কমনওয়েলথ ভারোত্তোলনের ইয়ুথ বিভাগে রুপা জেতেন রেশমা। তিনি বলেন, ‘বিদেশে পদক জেতার আনন্দই আলাদা। এ নিয়ে তৃতীয়বার বিদেশের মাটিেেত পদক জিতেছি। ভবিষ্যতে অলিম্পিকে খেলতে চাই।’ একই স্বপ্ন এশিয়ান অ্যান্ড আরব ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতায় ৬৩ কেজিতে ব্রোঞ্জ জয়ী মাবিয়া আক্তার সিমান্তরও। তার কথায়, ‘আমার লক্ষ্য ভবিষ্যতে অলিম্পিকে পদক জেতা। ফেডারেশন সহযোগিতা করলে সে লক্ষ্যেই আমি খেলে যেতে চাই।’ ২০১১ সালে ভারোত্তোলনে আসা সিমান্ত বলেন, ‘২০১২ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত সাফ ভারোত্তোলন চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ এবং ২০১৩ সালে মালয়েশিয়ায় কমনওয়েলথ ভারোত্তোলনের জুনিয়রে রুপা ও ইয়ুথ বিভাগে ব্রোঞ্জ জিতেছিলাম। ভবিষ্যতে আমি অলিম্পিকে পদক জেতাই আমার লক্ষ্য।’
তবে রেশমা ও সিমান্তের সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে বলে মনে করেন মোল্লা সাবিরা। তার কথায়, ‘দীর্ঘ মেয়াদী অনুশীলনের মধ্যে থাকলে অনেক কিছুই সম্ভব। অলিম্পিকে পদক জয় খুব কঠিন। তবে অসম্ভব নয়। এ জন্য একজন ভারোত্তোলককে কম করে হলেও চার থেকে পাঁচ বছরের কঠোর অনুশীলনের মধ্যে থাকতে হবে। সাধনা করতে হবে। আমি মনেকরি রেশমা ও সিমান্ত সেই সুযোগ রয়েছে। তাদের বয়স কম। তারা দীর্ঘ মেয়াদী অনুশীলনের সুযোগ পেলে লক্ষ্যে পোঁছতে পারবে।’