মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট ২০১৯
প্রথম পাতা » অপরাধ | ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » ছাত্রলীগের হেফাজতি পোস্টার ও সমালোচনার ঝড়
ছাত্রলীগের হেফাজতি পোস্টার ও সমালোচনার ঝড়
রাশেদুল ইসলাম রাশেদ সাবেক চঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা ফেসবুক পোষ্ট এ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এভাবেই
সহীহ ইসলাম ধর্মের প্রকাশের কারণে কিন্তু ছাত্রলীগের পোস্টারে কোন ছবি নেই, বঙ্গবন্ধু, নেত্রীর কারো ছবি নেই, নেপথ্যে কি জানিনে। কিন্তু এমন পোস্টার ছাত্রলীগের ইতিহাসে বিরল, সম্ভবত আর কখনো হয়নি। গেস্টদের জন্য কি না, তাও জানিনা। তবে তারা যখন টিভিতে প্রোগ্রাম করে তাদের তখন বিধান কি হয়, তা কিন্তু ইসলাম মোতাবেক প্রশ্নবিদ্ধ! পোস্টারে ছবি ইসলামিক দলগুলো দেয় না। ছাত্রলীগ যে তেমন সহীহ্ ইসলামিক হয়ে গেল, তা আমার মতো নগন্য লোক বুঝে না! কেন হলো? অথচ ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ কোন ধর্মীয় দল নয়। সেকুলার হিউম্যানিজমের ভিত্তিক দলের গঠন, গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত!!!
বিশেষ কিছু লেখার সখ নেই, কেননা তখন শকট হতে পারে কেউ কেউ। আর ভেতরের আলোচকদের নিয়ে আলোচনা করার তেমন কোন যুক্তি নেই।
কোথায় আজ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ? এ প্রশ্নের জবাবে কোন সদুত্তর আছে কি? নেই!!!
বিভাষ বাড়ৈ ॥ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে পবিত্র কোরান খতম ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে ছাত্রলীগ। অনুষ্ঠানের পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের পাতা। কিন্তু রীতিমতো ছাত্রশিবিরের মতো পোস্টার তৈরি, জাতির জনক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ব্যবহার না করা ও চিহ্নিত জামায়াতীদের অনুষ্ঠানে অতিথি করা নিয়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। সমালোচনার ঝর বইছে নেতাকর্মীর মাঝে।
জানা গেছে, ছাত্রলীগের পোস্টার ও শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য নিয়ে এর আগেও বহুবার বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে সংগঠনের ভেতরেই। সভায় ‘জয় বাংলা’ না বলে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খালেদা জিয়াকে বিএনপির দেয়া অভিধা ‘দেশনেত্রী’ বলে অভিহিত করার ঘটনায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ক্ষোভ এখনও আছে। তবে এবার জাতির জনকের শাহাদাতবার্ষিকীতে করা পোস্টার ও আয়োজন নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন সংগঠনটির অধিকাংশ নেতাকর্মী।
ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার লাগানো হয়েছে। ঢাবির মধুর কেন্টিন ও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসু ভবনে ছেয়ে গেছে পোস্টারে। শীর্ষ নেতারা নিজেদের ফেসবুক পেজেও দিয়েছেন পোস্টারের ছবি। তবে সোমবার সকালে পোস্টার নেতাকর্মীদের নজরে আসার পরই অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। দেখা গেছে পোস্টারে কোথাও নেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ছবি। কোন ছবি ব্যবহার না করে পোস্টারের রং দেয়া হয়েছে ছাত্র শিবির ও খেলাফত মজলিশের মতো মৌলবাদী সংগঠনের করা পোস্টার বা ব্যানারের মতো।
লেখা আছে ‘পবিত্র কুরআন খতম ও দোয়া মাহফিলে’ সভাপতিত্ব করবেন ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, সঞ্চালনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, প্রধান অতিথি মাননীয় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ। কোরান তেলওয়াতে শায়খ আহমাদ বিন ইউসুফ আল আজহারী, সাইদুল ইসলাম আসাদ, তাওহীদ বিন আলী লাহোরী, সাইফুল ইসলাম আল হুসাইনী, তরিকুল ইসলাম, সাইফুর রহমান তকী ও তারেক জামিল।
হামদ-নাতে জাগ্রত কবি (?) মুহিব খান, আনিছ আনসারী, হাফেজ এমদাদুল ইসলাম, মামুন আনসারী, কাজি আমিনুল ইসলাম, আবু সুফিয়ান, এনামুল কবির, সফিউল্লাহ বেলালী, ইসহাক আলমগীর, হাসনাত রায়হান, ইশতিয়াক আহমাদ।
ডাকসুর সদস্য ও ছাত্রলীগের বিগত কমিটির সদস্য তানভীর হাসান সৈকত তার ফেসবুক ওয়ালে হতাশ হয়ে লিখেছেন, জাতির পিতা, জাতীয় সঙ্গীত, জয় মামা ও তার স্ত্রী নিয়ে কটূক্তিকারী এই জাগ্রত কবি মুহিব খান। যিনি জামায়াতের সকল প্রোগ্রামে গান পরিবেশন করতেন। তার বাবা আতাউর রহমান খান বিএনপির সাবেক এমপি। তিনি এই প্রোগ্রামের অতিথি!!!! তাহলে এটা কি জামায়াতের প্রোগ্রাম?
মুহিব খানের বাবা আতাউর রহমান খান ১৯৯১ সালে বিএনপি-জামায়াত মনোনীত প্রার্থী ছিলেন এবং তিনি জয় লাভ করেন কিশোরগঞ্জ সদর থেকে, সদরের সকলেরই এটা জানা। এমন একজন বিএনপি-জামায়াতের ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের এই অনুষ্ঠানে কে বা কারা প্রোভাইড করল?
সাবেক কর্মসূচী ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন বলেন, শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কর্মসূচীর আয়োজন করবে। সেই কর্মসূচীর পোস্টারে জাতির পিতাসহ শহীদদের কারও ছবি নেই। এটা ছাত্রলীগের কর্মসূচীর সঙ্গে যায় না। মুহিব খান স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। সে জাতির পিতাকে স্বীকার করে না, জাতীয় সঙ্গীতকে মানে না। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সম্পাদক আনন্দ সাহা পার্থ লিখেছেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আয়োজনে কোরান খতম, হামদ-নাত পরিবেশনা ও দোয়া মাহফিল প্রোগ্রামে কাদেরকে অতিথি করেছেন, সবাই কি আওয়ামী লীগের পক্ষের লোক নাকি জামায়াত-বিএনপির লোকজনও আছে? ‘কুরআন খতম ও দোয়া মাহফিল’-এর অনুষ্ঠান থেকে জামায়াতের এই কুলাঙ্গারকে বাদ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সম্মানিত সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ভাই ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ভাইকে অনুরোধ করছি। ভুল হতেই পারে, শুদ্ধ করতে নিষেধ নেই বা ছিল না কখনই। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক দফতর বিষয়ক উপ-সম্পাদক শেখ নকিবুল ইসলাম সুমন লিখেন, জাতির পিতারসহ ১৫ আগস্টে কোন শহীদের ছবি ছাড়া ইতিহাস সৃষ্টিকারী পোস্টার।
বাণী ইয়াসমিন হাসি বলেন, জাতির পিতা, জাতীয় সঙ্গীত আর ত্রিশ লাখ শহীদকে নিয়ে প্রশ্ন তোলার ধৃষ্টতা যে দেখায় সেই কুলাঙ্গার কি করে এদেশের মুক্ত আলো হাওয়ায় ঘুরে বেড়ায়?
সহ-সভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে উদ্দেশে লিখেন, মুহিব খান আমাদের জাতির পিতাকে স্বীকার করে না। পিতাকে অস্বীকারকারী যে কেউ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মসূচীতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকলে তা সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট করে এবং জাতির পিতার আদর্শের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আমার বিশ্বাস, শ্রদ্ধেয় সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রিয় প্রতিষ্ঠানের আদর্শিক দিকের সুরক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ নিবেন।
অনুষ্ঠানের পোস্টার ও জামায়াতী কথিত কবি মুহিব খানসহ অন্তত ছয়জন বক্তাকে দেখে ক্ষুব্ধ অনেক অতিথিও। কবি মুহিব খানের দেশ, জাতির জনক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাবিদ্বেষী কবিতা গান ভাসছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কেবল তাই নয় এই ব্যক্তির আপত্তি বাংলাদেশ, দেশের পতাকা এমনকি জাতীয় সঙ্গীত, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়েও। জাতির জনক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাবিদ্বেষী কবিতা গান ছাড়াও দেশ, দেশের পতাকা জাতীয় সঙ্গীত, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে তার লেখা কবিতা জামায়াতীরা পরিবেশন করে তাদের কর্মসূচীতে। অনুষ্ঠানের জন্য অন্য যেসব হাফেজ ও ক্বারীদের নাম দেয়া হয়েছে তাদের অধিকাংশকে নিয়েই আপত্তি উঠেছে। ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্রান্ড ইমাম আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসঊদ পবিত্র হজ পালনের জন্য মক্কায় অবস্থান করায় তার মতামত দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে তার কর্মসূচী যারা দেখাশোনা করেন সেই আলেম ওলামাদের অন্তত তিনজন বলেছেন, সরকারবিরোধী ও জামায়াতীদের নিয়ে এ ধরনের অনুষ্ঠানের পক্ষে তারা নন। তারা সকলেই অনুষ্ঠানের অন্তত পাঁচজন হাফেজকে নিয়ে ঘোরতর আপত্তি তুলেছেন। কবি মুহিব খান প্রতিদিন সরকারবিরোধী, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তাকে ছাত্রলীগ এভাবে দাওয়াত দিতে পারে না।
সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে দফায় দফায় যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। সেলফোনে এসএমএস করলেও সাড়া দেননি তারা। অন্তত সাতজন সহ-সভাপতির সঙ্গে ফোনে কথা বলে বিষয়টি জানতে চাইলে তারা সকলেই বলেছেন, কর্মসূচীর পোস্টার আসার পর তারা বিব্রত। তবে তারা এর কিছু জানেন না। এমনকি সোমবার সকাল থেকে সভাপতি ও সেক্রেটারিকে বহুবার ফোন দিলেও তারা রিসিভ করেননি।
সহ-সভাপতিরা অনেকেই এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক তাজ উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, আমি ধর্ম সম্পাদক। ধর্মীয় অনুষ্ঠান আমারসহ আমরা যারা এই পদে আছি তাদের জানার কথা। কিন্তু আমরা জানি না। জানার জন্য আমি শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা ফোন ধরেননি।
সংবাদ সুত্র জনকণ্ঠ