বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০১৯
প্রথম পাতা » অপরাধ | ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » এবার ছাত্রলীগে শুরু হচ্ছে শুদ্ধি অভিযান
এবার ছাত্রলীগে শুরু হচ্ছে শুদ্ধি অভিযান
ডেস্ক -ছাত্রলীগের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ২৭৩ জনের তালিকা এখন আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে। এদের বিরুদ্ধে সন্তাস, চাঁদাবাজীসহ সংগঠনবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। শুধু অভিযোগই নয়, এসব অভিযোগের প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণও প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেওয়া হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। শেখ হাসিনা অনুমোদন দিলে এদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রী আগামী দুই-একদিনের মধ্যে ছাত্রলীগের নতুন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ডেকে পাঠাবেন। এদের সম্বন্ধে যে অভিযোগগুলো রয়েছে, সেগুলো জানাবেন এবং তাদের বি’রুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেবেন। তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একবারেই এদেরকে বহিষ্কার করা হবে না। এদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। এদের কোনো জবাব যদি সন্তোষজনক না হয় তাহলেই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য যে, রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং গোলাম রাব্বানীকে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছিল। শোভন-রাব্বানী সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক হওয়ার প্রায় একবছর পরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এই পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অনেক অনুপ্রবেশকারী এবং সন্ত্রা’সীসহ বিভিন্ন বিতর্কিত ব্যক্তিদের নাম ছিল বলে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছিল। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ সমাবেশ এবং বিক্ষোভ করছিল, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখাও করেছিল।
প্রধানমন্ত্রী তার নিজস্ব টিম দিয়ে কমিটিতে বিতর্কিত ব্যক্তিদের ব্যাপারে তদন্ত করেছিলেন। সেই তদন্তে তিনি ১১ জনের বিরুদ্ধে সুর্নির্দিষ্ট অভিযোগের বিরুদ্ধে প্রমাণ পেয়েছিলেন। কিন্তু তারপরেও তখন শোভন-রাব্বানী কমিটি তাদের বি’রুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি বা তাদেরকে বাদ দেয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, কেন্দ্রীয় কমিটিতে যে ১১ জনকে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে সেই ১১ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রক্রিয়া শুরুর জন্য প্রধানমন্ত্রী খুব শিগগিরই নির্দেশ দেবেন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ জন নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে এবং তারা তাদের বয়স গোপন করেছেন, বিবাহিত থাকার পরেও ছাত্রলীগের নেতা হয়েছেন। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, বিবাহিত কেউ ছাত্রলীগের সদস্য থাকতে পারবেন না।
বুয়েটে সম্প্রতি আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় ছাত্রলীগের ১৯ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে যে, আরও ১২ জনকে বিভিন্ন সংগঠনবিরোধী তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগে বহিষ্কারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে যে ২ সদস্যের তদন্ত কমিটি হয়েছিল তার রিপোর্ট এবং গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের ভিত্তিতে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের অন্তঃকলহের মূল কারণ চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাণিজ্যসহ বিভিন্ন সংগঠনবিরোধী তৎপরতা বলেই আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ মনে করছেন। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণেরও তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে যে, প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব টিম সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, সহিংসতার প্রেক্ষিতে অনুসন্ধান করেই এই ২৭৩ জনের তালিকা প্রণয়ন করেছে এবং এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে। তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা আরও বেশি। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন যে, ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে কেউ কোনো অপরাধ করলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে বহিষ্কার করা হবে। সেই প্রক্রিয়া এখনই শুরু হচ্ছে।