রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০১৯
প্রথম পাতা » তথ্য-প্রযুক্তি » ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদকে টেমস নদে পরিণত করার মাস্টার প্ল্যান
ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদকে টেমস নদে পরিণত করার মাস্টার প্ল্যান
পক্ষকাল নিউজ
ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা নদীকে রক্ষা ও দৃষ্টিনন্দন করতে মাস্টার প্ল্যান গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী, ইংল্যান্ডের টেমস নদীর আদলে বুড়িগঙ্গাকে গড়ে তোলা হবে।প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৪৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। তবে অর্থের প্রয়োজন হলে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো হবে। আগামী ২০২২ সাল থেকে প্রকল্পের কাজ দৃশ্যমান হবে।
সূত্র জানায়, নদীর জায়গা-জমি দখল করে বুড়িগঙ্গার দুই তীরে গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন নতুন স্থাপনা। অন্যদিকে কল-কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য ও রাজধানীর প্রায় দেড় কোটি মানুষের মল-মূত্র পড়ে নষ্ট হয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়েছে বুড়িগঙ্গা নদীর পানি। ফলে নদীটি আজ মৃত্যু পথের পথিক।
এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুড়িগঙ্গাকে পুরানো চেহারায় ফিরিয়ে আনার নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ি বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে এ পরিকল্পনাটি নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ঢাকার চারপাশে সার্কুলার নৌপথ চালু করে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন সহজতর করারও পরিকল্পনা নেয়া হবে। বুড়িগঙ্গা হবে আনন্দ ও বিনোদনের প্রাণকেন্দ্র।অবকাশ যাপনের জন্য নদীর তীরে থাকবে বিলাসবহুল রিসোর্ট, হাঁটার রাস্তা, পার্ক, বসার স্থান, নদীঘাট, পর্যটকদের জন্য প্রমোদতরী, ভাসমান বিনোদন কেন্দ্র ও রেস্তোরাঁ। সবুজে সবুজে ভরে তোলা হবে নদীর পাড়। নদীর দুই পাড়ে থাকবে আধুনিক সাজসজ্জাসহ আলোকসজ্জা। দেশি-বিদেশি ফুল ও সাজবৃক্ষ দিয়ে সাজানো হবে পাড়। কিছু স্থান রাখা হবে খোলামেলা। নদীর দুই পাশে চালু করা হবে উন্নত বাস সার্ভিস। এ ছাড়া বুড়িগঙ্গার দুই তীর ঘেঁষে থাকবে সিরামিকের তৈরি ওয়াকওয়ে। দর্শনার্থীদের বসার জন্য ছোট ছোট টেবিল। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে থাকবে প্রমোদতরী। সব বয়সের দর্শনার্থীদের জন্য থাকবে বিনোদন পার্ক। থাকবে তিন তারকা মানের কয়েকটি রিসোর্টও। উন্নত দেশের নদী বন্দরের আদলে সদরঘাটকে (লঞ্চ টার্মিনাল) সাজানো হবে।সূত্র আরো জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী নদীর মূল অবস্থান অটুট রেখে ইংল্যান্ডের টেমস নদীর আদলে রূপান্তর করা হবে। নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনা হবে। আর বুড়িগঙ্গার দুই তীরে হাতিরঝিলের আদলে স্থাপনা নির্মাণ করা হবে।
বুড়িগঙ্গার পানির মান ঠিক রাখতে কয়েকটি পানি শোধনাগার (রিসাইকেল পন্ড) থাকবে। রাজধানীর ১৮টি সুয়ারেজ পাইপের পানি ফিল্টারিং করতে প্রাথমিক পর্যায়ে আট থেকে ১০টি পরিশোধন প্ল্যান্ট বসানো হবে। পানির মান ঠিক রাখতে ইংল্যান্ডের আদলে রাজধানীর সুয়ারেজ লাইনের পানি বুড়িগঙ্গায় পড়ার আগে তা আলাদা তিন থেকে দশটি পুকুরে রাখা হবে। প্রথম পুকুরে দূষিত পানি ফিল্টারিং হয়ে কয়েকটি পুকুর হয়ে বুড়িগঙ্গা নদীতে যাবে। এর ফলে দূষিত হবে না পানি। পানি থাকবে বিশুদ্ধ ও পরিষ্কার।এ ব্যাপারে নৌ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা নদী এখন মৃতপ্রায়। বুড়িগঙ্গার প্রাণ আনতে ইংল্যান্ডের টেমস নদীর আদলে আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন করতে একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে।’সংশ্লিষ্ট অপর এক কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘১৮০০ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক আবাসিক প্রতিনিধি জন টেইলর বুড়িগঙ্গা নদীর রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন- বর্ষাকালে যখন বুড়িগঙ্গা পানিতে ভরপুর থাকে, তখন দূর থেকে ঢাকাকে দেখায় টেমসের মতো। সে কথা মাথায় রেখে ঢেলে সাজানো হবে।’
নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বুড়িগঙ্গার প্রাণ ফিরিয়ে আনতে বুড়িগঙ্গাকে দূষণমুক্ত, আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন করতে একটি মাস্টার প্ল্যান গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনা হবে। নান্দনিক সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করা হবে।’নদীরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘চামড়াশিল্পের বিষাক্ত বর্জ্য, পলিথিন, আবর্জনা ও ময়লায় বুড়িগঙ্গা নদী দূষণে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে মৃত প্রায় নদীতে পরিণত হয়েছে। এজন্য লন্ডনের টেমস নদীর আদলে বুড়িগঙ্গা নদীর অবয়ব তৈরি কর হবে।’নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা নদী এখন মৃতপ্রায়। বুড়িগঙ্গার প্রাণ আনতে একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। বুড়িগঙ্গাকে হাতিরঝিলের মতো নয়নাভিরাম করা হবে। বুড়িগঙ্গা হবে আনন্দ বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু। ’তিনি বলেন, ‘বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারপাশের নদীর জায়গা নতুন করে কেউ যদি ভরাট বা দখলের চেষ্টা করেন, সেটা বড় ধরনের ভুল হবে। আগের সরকার আর বর্তমান সরকার এক নয়। আমরা যা বলি তাই করি।’