সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০১৯
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » সিরিয়ায় তুর্কি অভিযান নিয়ে ক্ষুব্ধ কেন ইসরায়েল?
সিরিয়ায় তুর্কি অভিযান নিয়ে ক্ষুব্ধ কেন ইসরায়েল?
পক্ষকাল সংবাদ
চলতি মাসের শুরুতে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে কুর্দি মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে এক অভিযান পরিচালনা করেছিল তুরস্ক। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ানের এই পদক্ষেপে পশ্চিমা বিশ্বে নিন্দার ঝড় উঠেছিল।
তবে এই অভিযানের বিপক্ষে ইসরায়েল যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল তা একদম অভাবনীয় ছিল। সম্প্রতি আল জাজিরায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আদনান আবু আমের ইসরায়েলের এই প্রতিক্রিয়ার কারণ বিশ্লেষণ করেছেন।
তুর্কি অভিযানের কয়েকদিনের মধ্যেই বিভিন্ন মতাদর্শের কারণে গভীরভাবে বিভক্ত ইসরায়েলি রাজনীতিবিদরা সব বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠেছিলেন। কট্টর ডানপন্থী থেকে শুরু করে বামপন্থী সকলেই এই অভিযানের নিন্দা জানানো শুরু করেন। কেবল রাজনীতিবিদই নয় দেশটির বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে সাংবাদিকরা পর্যন্ত একত্রিত হয়ে তুরস্কের সমালচনায় মেতে উঠেন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীও তুরস্কের কুর্দিবিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে সরব হয়ে উঠেছিল। প্রতিটি ইসরায়েলিই কুর্দিদের পক্ষে নিজেদের অকুন্ঠ সমর্থন প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি কুর্দিদের পক্ষে থাকার জন্য তারা পশ্চিমা নেতাদের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছিল।
এমনকি ইসরায়েলের সাধারণ নাগরিকরাও কুর্দিদের পক্ষে নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। এই ইস্যুতে টুইটারে তাদের সরব উপস্থিত দেখা গেছে। #ফ্রিকুর্দিস্থান হ্যাশট্যাগ দিয়ে তারা কুর্দিদের সমর্থন জানিয়ে টুইট করেছেন। এছাড়া কুর্দিদের জন্য স্বাধীন একটি দেশেরও দাবি জানিয়েছে ইসরায়েলিরা।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর অনেকেই ইসরায়েল সরকারের প্রতি আবেদন জানিয়ে একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করেন। কুর্দিদের খাদ্য, পোশাক এবং চিকিৎসা সহায়তা ছাড়াও সামরিক এবং গোয়েন্দা সহায়তা দেয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু তুর্কি অভিযানের কিছুক্ষণের মধ্যেই এই অভিযানের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, সিরিয়ার কুর্দিদের মানবিক সহায়তা দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে ইসরায়েল।
কুর্দিদের প্রতি ইসরায়েলিদের এই ব্যাপক সমর্থনের কারণ জানাতে গিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা কুর্দি এবং ইহুদীদের মধ্যে ঐতিহাসিক সংযোগের দিকটি তুলে ধরেছেন। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের আধিপত্য বেড়ে যাওয়ার ভয়ও ইসরায়েলকে চিন্তিত করে তুলেছিল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নিয়ে এই অঞ্চলের কুর্দি মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে তুর্কিদের অবাধ অভিযানের সুযোগ তৈরি করে দেন। স্বাভাবিক কারণেই এই ঘটনায় ইসরায়েল সমস্যায় পড়ে যায়। কারণ এর পর রাশিয়া ছাড়া সিরিয়ায় বড় কোন বৈশ্বিক ক্ষমতার অস্তিত্ব আর থাকে না।
এদিকে ইরান রাশিয়ার দীর্ঘদিনের মিত্র। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সিরিয়ায় ইরানি প্রভাব বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে ইরান সহজেই ইরাক এবং সিরিয়ার মধ্য দিয়ে লেবাননের হিজবুল্লাহর কাছে তাদের অস্ত্র পাঠাতে পারবে। প্রসঙ্গত, ইসরায়েল সরকার হিজবুল্লাহকে ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করে।
এছাড়া সিরিয়া যুদ্ধের সুযোগে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী সিরিয়ান সামরিক অস্ত্র বহরে এবং হিজবুল্লাহর উপর বেশ কয়েকবারই হামলা করেছিল। কিন্তু বর্তমানে এই এলাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে গেলে ইসরায়েলের পক্ষে এধরনের অভিযান করা সম্ভব নয়। ফলে এসব কারণেই সিরিয়ায় তুর্কি অভিযান নিয়ে মোটেও খুশি ছিল না ইসরায়েল।